সাধারণত ডায়াবেটিস মেলাইটাস, ডায়াবেটিস বলে পরিচিত ।
আরেক রকম ডায়াবেটিস হয় , যেটি হলো ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস, সেটি আমরা অন্য আর্টিকেলে ব্যাখ্যা করব।
সেটি বহুমূত্র রোগ বলে পরিচিত যাতে আক্রান্ত ব্যক্তিকে ঘন ঘন মূত্র (urine) ত্যাগ করতে হয় ।
ডায়াবেটিস কি ?
ডায়াবেটিস বা ডায়বেটিস মেলাইটাস হলো এমন একটি রোগ যাতে আপনার রক্তে শর্করার বা সুগারের মাত্রা বেড়ে যায় ।
আমরা যে খাবার খাই সাধারণত সেই খাবার তিন রকমের হয়, কার্বোহাইড্রেট , প্রোটিন এবং ফ্যাট।
তার মধ্যে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার থেকে যে শর্করা আসে সেটি ব্লাড গ্লুকোজ ( শর্করা ) হিসেবে শরীরে সব রকম কাজ করার জন্য শক্তি যোগান দেয়।
ইনসুলিন নামক হরমোনটি যেটি অগ্নাশয় থেকে ক্ষরণ হয়, সেটির কাজ হল সেটি শরীরে রক্ত থেকে শর্করা বা গ্লুকোজ কে প্রত্যেকটি কোষে কোষে পৌঁছে দেওয়া।
ডায়াবেটিস কখন হয় এবং ডায়াবেটিস হওয়ার কারণ
এই ইনসুলিন নামক হরমোনটির কাজ হল শরীরের রক্ত থেকে শর্করাকে প্রত্যেকটি কোষে কোষে পৌঁছে দেওয়া।
যখন শরীরে ইনসুলিন খুবই কম মাত্রায় তৈরি হয় অথবা ইনসুলিন একদমই তৈরি হয় না তখন এই অতিরিক্ত শর্করা বা সুগার রক্ত থেকে কোষে যেতে পারে না।
এর ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায় এবং তাকে ডায়াবেটিস বলে।
ডায়াবেটিসের লক্ষণ – কি করে বুঝবেন ডায়াবেটিস হয়েছে
ডায়াবেটিস বা রক্তে অতিরিক্ত শর্করা অতিরিক্ত হলে আপনার সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারবাবুর পরামর্শ করা উচিত, কি করে বুঝবেন যে আপনার শরীরে ডায়াবেটিস হতে পারে তা আমরা ব্যাখ্যা করছি।
একটা বয়সের পর যেমন ৪৫ বছর বয়সের পর আপনার নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করানো উচিত প্রতি বছর ।
প্রচুর খিদা পাবে আপনার সব সময়
যেহেতু শরীরে অতিরিক্ত শর্করা থাকা সত্ত্বেও শরীর সেটা কাজে লাগাতে পারে না, ইনসুলিন নামক হরমোনটির কম ক্ষরণ বা অনুপস্থিতির কারণে,
এই ডায়াবেটিস রোগীরা অনেক খাবার খেলেও খিদা কমতেই চায়না ।
ওজন খুব দ্রুত কমতে থাকবে
যদি দেখেন যে আপনার কোন কারণ ছাড়াই হঠাৎ খুব ওজন কমে যাচ্ছে, তাহলে তৎক্ষণার ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিন। কারণ এটি ডায়াবেটিসের লক্ষণ হতে পারে।
সব সময় ক্লান্তি ক্লান্তি ভাব এবং কোন কাজ করতে অনীহা
যেহেতু অতিরিক্ত শর্করা রক্ত থেকে কোষে পৌঁছাতে পারে না তাই শরীরের কোষগুলিও তাদের দরকারি গ্লুকোজ বা শক্তি থেকে বঞ্চিত হয়।
এর ফলে কোন কাজ করার ইচ্ছা হয় না ডায়াবেটিস রোগীদের বা কোন কাজ করতে গেলে তারা খুব ক্লান্ত বোধ করে।
চোখে দেখতে অসুবিধা হওয়া
দেখেন হঠাৎ করে আপনার চোখের পাওয়ার খুব বেড়ে গেছে বা কমে গেছে তাহলে তৎক্ষণাৎ ডাক্তার বাবুর পরামর্শ নিন।
ডায়াবেটিস চোখেও প্রভাব ফেলে তাই চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়া বা কমার উপরে ডায়াবেটিস এর হাত থাকতেই পারে।
ডায়াবেটিসের স্বাভাবিক মাত্রা কত – ডায়াবেটিস নরমাল পয়েন্ট কত
খালি পেটে –
আপনি খাবার না খেয়ে খালি পেটে ডায়াবেটিস মাপেন তাহলে –
৮০ থেকে ১২০ mg/dl (80 – 120 mg/dl ) ।
খাবার খাবার দু’ঘণ্টা পরে –
ভাই আপনি খাবার খেয়ে তার দু’ঘণ্টা পরে ডায়াবেটিস মাপেন তাহলে –
140 mg/dl ( 140mg/dl ) এর থেকে কম হতে হবে।
ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
প্রথমে একটা কথা বলেদি যে ডায়াবেটিস জীবনশৈলীর সঙ্গে যুক্ত একটি রোগ ।
ডায়াবেটিসের কারণ পুরোপুরি জানা যায় না তবুও কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে যারা অলস জীবন যাপন করেন এবং যাদের ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি দেখা দেয় ।
- নিয়মিত শরীর চর্চা করুন
গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা নিয়মিত শরীর চর্চা করেন তাদের ডায়াবেটিস বা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
যখন আপনি কোন রকম ব্যায়াম করেন বা শারীরিক কসরত করেন, যেমন সাইকেল চালানো, দৌড়ানো, হাটা বা ওয়েট লিফটিং করা বা ঘরে খালি হাতে ব্যায়াম করা।
এইসব করলে আপনার শরীরের মাংসপেশিগুলো অতিরিক্ত শর্করা ব্যবহার করে নেবে রক্তের থেকে, এর ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাবে
যা আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে।
এছাড়া নিয়মিত শরীর চর্চা করলে ইনসুলিন রিসেপ্টারেও ভালো থাকে ফলে ডায়াবেটিস হবার বা বৃদ্ধি পাবারও সম্ভাবনা কমে যায়।
ওজন কমানোর খুঁটিনাটি জানতে হলে পড়ুন- কি করে ওজন কমাবেন সাথে ফুড চার্ট
- কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার কম করে খান
কার্বোহাইড্রেট থেকেই শরীর গ্লুকোজ বা শর্করা তৈরি করে, যেটার মাধ্যমে পুরো শরীরের সমস্ত কোষগুলি তাদের কাজ করতে পারে।
যদি আপনি খুব বেশি মাত্রায় কার্বোহাইডেট খান তাহলে আপনার শরীরে স্বাভাবিকভাবেই গ্লুকোজ বা শর্করার মাত্রাও বৃদ্ধি পাবে ।
বিভিন্ন রকম গবেষণায় দেখা গেছে যে যদি আপনি আপনার কার্বোহাইড্রেট নিয়ম করে খান বা মেপে জুকে খান তাহলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে ।
তাই যদি আপনি কম কম করে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বারবার খান তাহলে হঠাৎ করে রক্তে শর্করার মাত্রা খুব বেশি বেড়ে যায় না।
এর ফলে ইনসুলিন রিসেপ্টারগুলোর উপর চাপও পড়ে না ।
এই ঘটনা কে ইনসুলিন স্পাইক বলে,
ইনসুলিন স্পাইক যদি বেশি হয় তাহলে ইনসুলিন রিসেপ্টর এর ওপর চাপ পড়ে যা ডায়াবেটিস হবার অন্যতম কারণ।
চেষ্টা করুন কম করে কার্বোহাইড্রেট খেতে যখনি খাচ্ছেন, একেবারে অনেকটা বেশি কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার যেমন ভাত রুটি এসব খাবেন না।
- ফাইবার জাতীয় খাবার বেশি করে খান
বিভিন্ন গবেষণা দেখা গেছে যদি আপনি ফাইবার জাতীয় খাবার খান, তাহলে সেটি শর্করার পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়ায় রক্তে যার ফলে রক্তে শর্করার অত্যাধিক মাত্রা হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
তাই চেষ্টা করুন বিভিন্ন রকম শাকসবজি,ফল,বিন্স ,ডাটা এবং শস্যদানা জাতীয় খাবার খেতে যেগুলোর মধ্যে ফাইবার বেশি পরিমাণে থাকে ।
মনে রাখবেন খুব বেশি খাইবার জাতীয় খাবার খাওয়াও উচিত নয়, তাই অবশ্যই ডাক্তার বাবুর সাথে পরামর্শ করে নেবেন খুব বড় রকমের কোন পরিবর্তন খাদ্য তালিকায় আনার আগে।
- নিয়মিত জল খান
নিয়মিত জল খেলে আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং এটাও দেখতে হবে যাতে আপনি ডিহাইড্রেশন বা জলের অভাব যাতে আপনার শরীরে না হয়।
এটা খেয়াল রাখবেন যে আপনি যেন খালি জলই খান কোন সুগার জাতীয় ড্রিংক যেমন কোল্ড্রিংস বা ফলের রস খেলে কিন্তু হবে না।
শুধু জল খেলে তাতে কোন ক্যালরি থাকে না এবং সেটিতে কোন সুগার থাকে না তাই সেটি সব থেকে বেশি ভালো।
- কম কম করে খান কিন্তু বারে বারে খান
যদি আপনার ডায়াবেটিস হয়ে থাকে বা ডাইবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে আপনি আপনার খাদ্য তালিকা কে কিছুটা পরিবর্তন করুন।
মনে রাখবেন যদি আপনি কম কম করে খান কিন্তু বেশি বাইরে খান তাহলে সেটা আপনার জন্য ভালো।
কম খেলে কি হবে আপনার শরীরে হঠাৎ করে অনেক বেশি গ্লুকোজ আপনার রক্তে বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না, এছাড়া খুব বেশি গ্লুকোজ একেবারে চলে আসলে সেটিকে কোষে পৌঁছাতে ইনসুলিনকেও বেশি কাজ করতে হবে।
তাই কম কম করে খান বারে বারে খান কিন্তু কতটা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খাচ্ছেন সেটি মেপে জুকে খান।
- নিয়মিত রক্ত শর্করা বা ডায়াবেটিসের পরীক্ষা করুন
নিয়মিত একটা বয়সের পরে রক্ত শর্করা বা ডায়াবেটিসের পরীক্ষা করা খুবই দরকারি।
একটি কথা মনে রাখবেন যে ডায়াবেটিস হলো স্লো পয়জন বা ধীরে ধীরে আপনার ক্ষতি করবে।
যত আগে আপনার ডায়াবেটিস ধরা পড়বে, তত আপনার জন্য ভালো কারণ।
তাহলে উপযুক্ত চিকিৎসা আপনি শুরু করে দিতে পারবেন এবং আপনার খাদ্য তালিকাতে ও প্রয়োজনীয় সংশোধন করে নিতে পারবেন।
ডায়াবেটিস কিন্তু চোখ কিডনি এবং স্নায়ুতন্ত্র প্রত্যেকটি জায়গাতেই প্রভাব বিস্তার করে তাই এটি অবহেলা করার কোন বিষয় নয়।
Pingback: ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা, সাথে রইল ফুড চার্ট - bigyani